আজ ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাতিল হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বিতর্কিত চুক্তি !


অনলাইন ডেস্ক

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে দেয়া চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ইজারা দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে সরকার। বিশেষ করে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে দেয়া ইজারাসমূহ পরীক্ষানিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে কমিটি করারও চিন্তাভাবনা চলছে। এ লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন চট্টগ্রাম সফর করবেন। উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক যেই অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখবো। সব চুক্তি বিশ্লেষণ করা হবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে চুক্তিসমূহ বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত: চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহায়েলকে নানা অভিযোগে আটক করার পর রিমান্ডে যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তিনি বন্দরের চেয়ারম্যান থাকাকালে শেষ বোর্ড সভায় তিনি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা পর্যালোচনারই যোগ্য।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলের শেষ দিকে বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা এবং সেবা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়। বিশেষ করে শেষ সময়ে রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান থাকাকালে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেগুলো থেকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ববঞ্চিত হয়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববর্তী চেয়ারম্যানের সময়ে কোনো প্রকার প্রতিযোগিতা ছাড়াই ওমেরা নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে বে-টার্মিনালের ১০০ একর জমি লিজ দেওয়া হয়। এ লিজ প্রক্রিয়ায় বন্দরের ভূমি বিভাগ এবং তত্কালীন চেয়ারম্যান সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। কিন্তু উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এটি লিজ দেওয়া হলে চট্টগ্রাম বন্দর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিগত চেয়ারম্যান বন্দরের ইনকনট্র্রেড ডিপোর পেছনের দুটি লাইটারেজ জেটি ওমেরার অনুকূলে বরাদ্দ দেয়। ঐ জেটিগুলোর বার্ষিক ভাড়া নির্ধারিত হয় ৮ কোটি টাকা। বন্দরের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে প্রথম বছরের ৮ কোটি টাকা জমা দেওয়ার কথা। এরপর ওমেরার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের চুক্তি সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ছয় মাস অতিক্রম হলেও ওমেরা চট্টগ্রাম বন্দরের অনুকূলে কোনো টাকা জমা দেয়নি। বন্দরের ভূমি বিভাগ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায়নি।

বন্দরসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সরকারি এবং বেসরকারি জেটিগুলোর প্রায় অর্ধেক অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলো ব্যবহার না করে বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে বাংলাদেশ লাভবান না-ও হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বর্তমানে যে জেটিগুলো কার্যকর ও নির্মাণাধীন আছে, সেগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত একটি জাতীয় দৈনিকের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, নানা অভিযোগ পাচ্ছি। এসব অভিযোগ নিয়ে এখন কিছু বলব না। আমি চট্টগ্রাম বন্দরে যাচ্ছি, সবকিছু দেখব। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কমিটি হবে। এতে বুয়েটসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিনিধি থাকবেন।

এদিকে বন্দরের বে-টার্মিনালে একটি লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল স্থাপনের জন্য সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ। এ প্রকল্পের জন্য প্রতিযোগিতা ছাড়া ১০০ একর জমি বরাদ্দ দেয় চট্টগ্রাম বন্দর। অবশ্য ইস্ট কোস্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। এ প্রকল্পে বিদেশি নামকরা কোম্পানি অংশ নেবে। উল্লেখ্য, ওমেরা ইস্ট কোস্ট গ্রুপেরই একটি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে বাংলাদেশের জন্য বে-টার্মিনালের মতো এত বড় প্রকল্পের প্রয়োজন আছে কি না—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর